ইমেজ সংকটে কাউন্সিলর তৌফিক, বিআরটিএর স্ক্যাপ দখল করলো ছাত্রনেতা আবছার

Yasin Hoque    |    ০৮:২২ পিএম, ২০২১-০১-০১


ইমেজ সংকটে কাউন্সিলর তৌফিক, বিআরটিএর স্ক্যাপ দখল করলো ছাত্রনেতা আবছার

ইয়াছিন হকঃ আগামী ২৭ জানুয়ারী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নগরীর দক্ষিণ পাহাড়তলি ওয়ার্ড থেকে জনগণের মনোনিত প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন এই এলাকার সাবেক জনপ্রিয় কাউন্সিলর তৌফিক আহম্মদ চৌধুরী। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও জনপ্রিয়তার কমতি নেই তার। এই ওয়ার্ড থেকে এবার আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজি মোঃ শফিউল আজিম। 

এই ওয়ার্ডে সরকারের সবচেয়ে বড় কেপিআই স্থাপনা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ রয়েছে। সদ্য বিদায়ী বছরের  ১৬ নভেম্বর থেকে বিআরটিএতে ২০০৪ মডেলের মেয়াদোর্ত্তীন ৩৬১৬ টি সিএনজি অটোরিকশা স্ক্যাপকরন কার্যক্রম শুরু করেছে। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সিএনজি অটোরিকশা মালিকদের জিম্মি করে নাম মাত্র টাকা দিয়ে স্ক্যাপ গুলো দখলে নিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি নুরুল আবছার। 

এই কাজটি যদিও তিনি একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে নিয়ন্ত্রণ করলেও মাঠ পর্যায়ে ওই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তৌফিক আহম্মেদ চৌধুরীর ছত্রছায়ায় করছেন বলে গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। তবে ছাত্র নেতা নুরুল আবছার গং তৌফিকের নাম ভাঙ্গিয়ে স্ক্যাপ দখল কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এই কাজের সাথে সাবেক কাউন্সিলর তৌফিক আহম্মেদ চৌধুরীর কোন সম্পর্ক নেই বলে প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। 

তিনি বলেন, আমি গত কয়েক মাস ধরে বিআরটিএ তে যায়নি। এসব কাজ আমি করিনা এবং কেউ করলে তাদেরও আমি সমর্থন দিবনা। আমার বিষয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও চট্টগ্রামের সাংবাদিক ভাইয়েরা সব খোঁজ খবর রাখেন।  পারিবারিকভাবে আমার পরিবার এই এলাকার গণমানুষের জন্য কাজ করতে স্থানীয় রাজনীতির সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। ক্লিন ইমেজের রাজনীতি করার সুনাম রয়েছে আমাদের। সামনে নির্বাচন আসছে, আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে একটি কুচক্রি মহল আমার নাম ব্যাবহার করে বিভিন্ন অপকর্ম চালাতে পারে। তবে এইসব বিষয়ের সাথে আমার কোন ধরনের সম্পৃক্তা নেই।

সূত্র বলছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর সিএনজি স্ক্র্যাপ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আবছার, তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে কাউন্সিলর তৌফিক চেধুরীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ মনসুর ও আব্দুল মান্নান নামের তিন ব্যক্তি। তবে মাঠ পর্যায়ে স্ক্র্যাপ ক্রয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রন করছে হাটহাজারী বিএনপি নেতা খসরু হত্যা মামলার আসামী মোঃ মোস্তফা। সিন্ডিকেটটি এই স্ক্যাপ বাণিজ্য কেন্দ্র করে প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে বলে বিভিন্ন সুত্র নিশ্চিত করেছে। 

জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ২০০৪ সালে প্রস্তুতকৃত ৩৬১৯ টি সিএনজি অটোরিকশা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়।  এই গাড়ি গুলো নিয়ে যেমন মালিকরা ভোগান্তিতে ছিল একই ভাবে ঝুঁকি নিয়ে এই গাড়ি গুলোতে ভ্রমন করেছে যাত্রীরা। ফলে গত ১৬ নভেম্বর থেকে স্ক্যাপকরণের কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম বিআরটিএ। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২০০০ টি পুরনো সিএনজি অটোরিকশা স্ক্যাপ করা হয়েছে। ধারাবাহিক ভাবে শেষ হবে বিআরটিএর চট্টগ্রাম সিলিং নির্ধারণ করা ১৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশা স্ক্যাপকরণ ও নতুন সিএনজি অটোরিকশা প্রতিস্থাপন কার্যক্রম। 

সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির তথ্য বলছে স্ক্যাপ করা সিএনজি অটোরিকশা গুলো ওজন হিসাব করে প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশার বাজার মূল্য আসে ৫ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৩৬১৯টি গাড়ির স্ক্যাপরে মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা। সাবেক ছাত্র নেতার এই সিন্ডিকেট প্রতিটি স্ক্যাপ সিএনজির মূল্য দিচ্ছে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা। গড়ে ১৫০০ টাকা করে ধরলেও ৩৬১৯ টি গাড়ির মালিককে তারা প্রদান করছে ৫৪ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা। হিসেব বলছে কব্জির জোড় দেখিয়ে সিএনজি মালিকদের প্রাপ্য আরো প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা চলে যাচ্ছে এই ছাত্রনেতার সিন্ডিকেটের পকেটে। 

স্ক্যাপ সিএনজি ক্রয় করার বিষয়টি স্বিকার করে প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে এই ছাত্রনেতা নুরুল আবছার বলেন, স্ক্যাপ সিএনজি তিনি সঠিক মূল্যে ক্রয় করছে। দীর্ঘদিন স্ক্যাপ ব্যবসা পরিচালনা করায় তিনি এতো বড় পরিসরের এই কাজটি হাতে নিয়েছেন। তবে তিনি দাবী করেছেন মালিকদের দেওয়া ছাড়াও মাটি থেকে একটি স্ক্যাপ সিএনজি ট্রাকে তুলতে তার ৭০০ টাকা খরচ হচ্ছে। তবে কিভাবে এত টাকা খরচ হয় বিষয়টি নিয়ে তিনি বিস্তারিত খোলাসা করেননি। 

এদিকে এইবিষয়ে ২/১ দিনের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম সিএনজি অটোরিক্সা অটোটেম্পো ফোর স্ট্রোক মালিক সমিতির (রেজি নং ২২৩০) সভাপতি শেখ মোঃ তানভীর আহম্মেদ। তিনি প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, সিন্ডিকেটের এমন নৈরাজ্যর বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের অবগত করলেও তারা এর কোন সমাধান দিতে পারেনি। তাই মালিকরা জিম্মি হয়েই কথিত নেতাদের হাতে পানির দামে স্ক্যাপ তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা এর স্থায়ী প্রতিকার চেয়ে ২-১ দিনের মধ্যে সিএমপি পুলিশ কমিশনার, দুদক এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের কাছে এই ছাত্রনেতার সিন্ডিকেটের বিষয়ে অভিযোগ দিবো।

তবে মালিক সমিতির এই নেতা এমন দাবী করলেও সূত্র বলছে চট্টগ্রাম মহানগরী অটোরিকশা-অটোটেম্পু মালিক সমিতির সভাপতি হায়দার আজম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক টিটিু চৌধুরীর একটি সম্পর্ক রয়েছে  এই সিন্ডিকেটের সাথে। সিএনজি স্ক্যাপ কার্যক্রম নিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে বিআরটিএর এলাকায় তারাও বিভিন্ন সময় সাবেক কাউন্সিলর তৌফিক আহম্মেদ চৌধুরীর পরিচয় ব্যবহার করছে। 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দরনগরী সিএনজি থ্রি হুইলার বেবি ট্যাক্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়াজি উল্ল্যাহ বলেন, মালিকরা বিভিন্ন সময় এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাই। আমিও এই আগে এই বিষয় গুলো সমাধানে চেষ্টা করেছি তবে কোন মালিক সাহস করে এগিয়ে আসতে পারেনা। 

স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, এবারের নির্বাচনেও কাউন্সিলর তৌফিক আহম্মেদ চৌধুরী বিপুল ভোটে জয় লাভ করবে। তৌফিক এর তীরে যেন জনতায় রায় না ভিড়ে সেই জন্য জনমুখে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বিআরটিএর চলমান কার্যক্রমে সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আবছার রা এমন পায়তারা করছে। তবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এখনই সচেতন হতে হবে সাবেক এই সফল কাউন্সিলরকে, এমটাই মনে করছেন তাঁরা।